Menu

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Tuesday, December 23, 2014

পাশের বেডের ছেলেটা -- তৌফিক আনজাম

মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই যখন দেখি আমার পাশের বেডের ছেলেটার সব মিলিয়ে মাসিক খরচ মাত্র ৩০০০ টাকা । আর এই ৩০০০ টাকা কোথা থেকে আসে জানেন ? ওই দূরে বাড্ডা, মতিঝিল কিংবা শ্যামলি কোন একটি বাসার কোন এক ছাত্র কে পড়িয়ে ।
ছেলেটার বাসা সেই নিভৃত পল্লীতে । বাবা গরিব কৃষক । মাঝে মাঝে যখন ভর্তি ফি কিংবা অন্য কারনে বেশি টাকার প্রয়োজন হয় ছেলেটা বেশ ইতস্তত করে দরিদ্র পিতার কাছে টাকা চাইতে । বাবা হয়তো বাড়ীর কোন একটা ছাগল বিক্রি করে টাকাটা পাঠায় । ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । একদিন নিশ্চয়ই ছেলে বড় অফিসার হবে, সেদিন হয়তো এই দুর্দিন থাকবে না । এজন্যে কষ্ট করে টাকা পাঠাতেও কষ্টটাকে কষ্ট মনে হয়না পিতার ।
ছেলেটার শার্ট মাত্র দুটা । সেই দুটা শার্ট চলছে বহুদিন । বন্ধুরা সবাই যখন এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করে তখন মাঝে মাঝে রাস্তায় সবাই মিলে এটা সেটা খায় । তাকে অনেকেই সাধাসাধি করে , সে নানা অজুহাত দেখায় । বিলাসিতা করার তার সুযোগ নেই । সন্ধ্যা হয়ে গেলে মাঝে মাঝে ছেলেটা একা একা হাটতে বের হয় । ক্যাম্পাসের নানা ধরণের মানুষগুলোর উচ্ছাস আর হাসিমুখ দেখে নীরবে । টিএসসির মোড়ে এসে ছেলেটার মাঝেমাঝে মনে হয় আহা মানুষের জীবনগুলো কত আনন্দের । লাইব্রেরীর সামনে ৫ টাকার একটা পাকোড়া খেয়ে এক সময় হেটে হেটে চলে আসে হলের দিকে । হলের বন্ধু গুলো এতো ভালো কেন ? একবার তার অনেক জ্বর হলো । সেবার বন্ধুরা পালাক্রমে খুব সেবা করেছিলো । এদের জন্য মাঝে মাঝে জীবন দিতে ইচ্ছা হয় ছেলেটার ।
গ্রাম থেকে আসা ছেলেটার মুখের ভাষা থেকে আঞ্চলিকতার ছাপ গুলো ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে । বাবা মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে জানতে চায় ছেলের কোন সমস্যা আছে কিনা । ছেলেটা হাসে আর বাবাকে আশ্বাস দেয় “না বাজান সমস্যা নাই”
একদিন কথাচ্ছলে যখন জানতে চাইলাম জীবনের লক্ষ্য কি ? ছেলেটা ফিক করে হেসে দিলো । শুধু বলল, আপাতত পরিবারটাকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে চায় । আমি জানি, এই ছেলেটা একদিন অনেক বড় হবে ।
একদিন ক্লাসের এক শিক্ষক বলছিলেন , “দেশে এখনো এরকম একটা বিদ্যাপীঠ আছে যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র ছেলেরা এসে পড়তে পারে । এটি না থাকলে যে কি হতো” ...
যখন খুব হতাশ হয়ে পড়ি , জীবন নিয়ে শঙ্কাগ্রস্থ হই তখন এই বন্ধুগুলোর দিকে তাকাই । কত সংগ্রাম করছে তারা জীবনে দাঁড়ানোর জন্য । মাঝে মাঝে নিজেকে নিয়ে গর্বও হয় যে আমি এরকম ফাইটারদের সাথে পড়াশোনা করি । আশা ফিরে পাই এই ভেবে যে এদের দেখে হয়তো একদিন কিছু একটা তো হতে পারবো ।
এই ছেলেটার গল্পটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের জীবনের সাথে মিলে যাবে , জীবন যুদ্ধের এই গল্প গুলো লেখা হয় হলের ছোট ছোট রুম গুলোতে । এগল্পগুলো অপ্রকাশিত থাকে । যেদিন প্রকাশিত হয় সেদিন ওই ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে ।
তখন অবাক বিস্ময় নিয়ে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় , জানিস ইনি ছাত্র জীবনে এরকম স্ট্রাগল করেছেন !!!